May 3, 2024, 2:28 pm

আজ ২৬ মার্চ বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক গৌরবদীপ্ত দিন।

আজ ২৬ মার্চ। বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক গৌরবদীপ্ত দিন। আজ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। হাজার বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে ১৯৭১ সালের এ দিনে বিশ্বের বুকে স্বাধীন অস্তিত্ব ঘোষণা করেছিল বীর বাঙালি। সবুজ জমিনে রক্তিম সূর্যখচিত মানচিত্রের তলে লিখেছিল স্বাধীন বাংলাদেশের নাম। আপন আত্মপরিচয়ের ডাকে প্রতিরোধে দাঁড়িয়েছিল স্বগৌরবে।

তবে জাতির জীবনে ২৬ মার্চ দিনটি একইসঙ্গে গৌরব পাশাপাশি শোকেরও। একাত্তরের ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা বাঙালির ওপর চালায় ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাযজ্ঞ। ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা দেন। যে ঘোষণা উঠে আসে বাংলাদেশসহ বিশ্ব গণমাধ্যমে। শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করে তুলে নেওয়া হয় পাকিস্তানে।
স্বাধীনতার ৫১তম বার্ষিকীতে জাতি মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করবে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের পৃথক বাণী দিয়েছেন। দেশবাসীকে জানিয়েছেন শুভেচ্ছা। দিবসটি উদযাপনে রাষ্ট্রীয়ভাবে নেওয়া হয়েছে নানা কর্মসূচি। এছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দল এবং সংগঠনের পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচির মাধ্যমে ঐতিহাসিক এ দিনটি উদযাপন করা হবে। আজ সাধারণ ছুটির দিন।

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ, একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে আমাদের আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ হলেও ১৯৪৭ সালে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তান নামের পৃথক রাষ্ট্রের জন্মের পরই তরুণ ছাত্রনেতা শেখ মুজিব এ ভূখণ্ডে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিলেন। দিনে দিনে পাকিস্তানিদের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বৈষম্যমূলক মনোভাব স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। শেখ মুজিব যে কোনো ত্যাগের বিনিময়ে বাঙালিদের অধিকার ও আত্মমর্যাদা রক্ষার প্রশ্নে অটল ছিলেন। তার অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী চিন্তার ফসল ছাত্রলীগ এবং আওয়ামী লীগ। যে সংগঠন দুটির সঙ্গে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন

৫২-এর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ’৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে জয়লাভ, ’৬২-এর আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন, ’৬৬-এর ছয় দফা, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানসহ সব আন্দোলন-সংগ্রামে এ সংগঠন দুটির ভূমিকা ছিল অপরিসীম। গণরোষের মুখে আইয়ুব খান আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা সংক্রান্ত অধ্যাদেশ বাতিল করতে বাধ্য হয়েছিল।

শেখ মুজিব হয়ে উঠেছিলেন বাঙালির আশা-আকাঙ্ক্ষার বাতিঘর, বঙ্গবন্ধু। ১৯৬৯ সালের ৫ ডিসেম্বর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঘোষণা করেছিলেন, ‘আজ হতে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় এ দেশটির নাম পূর্ব-পাকিস্তানের পরিবর্তে হবে শুধুমাত্র ‘বাংলাদেশ’। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ’৭০-এর নির্বাচনে জাতীয় পরিষদে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু, পাক-সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করে টালবাহানা শুরু করে। শেখ মুজিব অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন এবং ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে দীর্ঘ ২৩ বছরের শাসন-শোষণ থেকে মুক্তির লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট রূপরেখা দেন। ২৩ মার্চ সারাদেশে উত্তোলন হয় বাংলাদেশের মানচিত্রখচিত পতাকা

একাত্তরের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি সৈন্যরা ‘অপারেশন সার্চ লাইট’ এর নামে ঘুমন্ত নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। চালায় নির্মম হত্যাযজ্ঞ। ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে শেখ মুজিব গ্রেফতার হন। এর আগে তিনি স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। পাকিস্তানের মিয়াওয়ালী কারাগারে বন্দি করে তার ওপর চালানো হয় অমানুষিক নির্যাতন। অন্যদিকে মাতৃভূমিতে জাতির পিতার ডাকে বাংলার মুক্তিপাগল জনতা ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে উজ্জীবিত হয়ে যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

যুদ্ধকালীন ১৭ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপ-রাষ্ট্রপতি, তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এএইচএম কামারুজ্জামানকে মন্ত্রী করে মুজিবনগর সরকার শপথ গ্রহণ করে। পরবর্তীকালে মুক্তিযুদ্ধকে সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য সারাদেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয় এবং কর্নেল এম এ জি ওসমানী হন প্রধান সেনাপতি।

দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র যুদ্ধ শেষে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জনের মাধ্যমে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ শত্রুমুক্ত হয়। আসে স্বাধীনতা। কবির লেখনির মতো- ‘পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত/ঘোষণার ধ্বনি-প্রতিধ্বনি তুলে/নতুন নিশান উড়িয়ে/দামামা বাজিয়ে দিগ্বিদিক/এই বাংলায় তোমাকে আসতেই হবে হে স্বাধীনতা।’ লক্ষ প্রাণের বলিদান আর লাখো মা-বোনের সম্ভ্রমহানিতে অর্জিত এ স্বাধীনতা জাতির জীবনে হয়ে থাকবে চির অম্লান।

বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রাপ্ত তথ্যমতে, মহান ম‍ুক্তিযুদ্ধের এই ৯ মাসে ৭৫১ জন পুলিশ সদস্য শহীদ হওয়ার দলিল পাওয়া গেলেও। কিন্তু ধারণামতে প্রায় ১ হাজার ২০০ জন পুলিশ সদস্য শাহাদৎ বরণ করেন। সে বীর পুলিশ সদস্যদের প্রতি আমাদের সশ্রদ্ধ সালাম। জাতি তাদেরকে আজীবন মনে রাখবে। বাংলাদেশ পুলিশ তাদের এ মহান দেশপ্রেম ও আত্মত্যাগকে আজীবন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ রাখবে।

গণহত্যাকারীদের বিচার না করা পাকিস্তানের জন্য লজ্জাজনক
নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ১০:০৬ পিএম, ২৫ মার্চ ২০২২
গণহত্যাকারীদের বিচার না করা পাকিস্তানের জন্য লজ্জাজনক
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে গণহত্যা সংঘটনকারী তৎকালীন সামরিক জান্তাদের কোনো বিচার করেনি পাকিস্তান, এটা দেশটির জন্য একটি লজ্জাজনক ব্যাপার।

শুক্রবার (২৫ মার্চ) রাজধানীর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে ‘বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে গণহত্যা’ শীর্ষক এক সেমিনারে যোগদান শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, পাকিস্তানের উচিৎ ছিল তাদের (গণহত্যাকারীদের) বিচার করা।

এসময় মন্ত্রী পাকিস্তানের পরবর্তী প্রজন্ম একাত্তরের অপরাধ স্বীকার করবে এবং বাংলাদেশে গণহত্যাকারীদের বিচার করবে বলে আশা প্রকাশ করেন।

ড. মোমেন বলেন, বাংলাদেশ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের বাধার সম্মুখীন হয়েছে। শুধু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্যই যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল করা সম্ভব হয়েছে, অন্যথায় আমরা এটা করতে পারতাম না। বাংলাদেশের কোনো কোনো মহলের কারণে গণহত্যার বিষয়টি বহু বছর ধরে চাপা পড়েছিল।

মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রচেষ্টায় যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যার বিচারের বিষয়টি তুলে আনা হয়েছে। ২৫ মার্চকে ‘বাংলাদেশের গণহত্যা দিবস’ হিসেবে বৈশ্বিক স্বীকৃতি আদায়ের জন্য ঢাকা প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

‘বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে ২৫ মার্চকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে স্মরণ করার প্রস্তাব গৃহীত হয়। যা শুধু দেশের জন্য গৌরবময় নয়, মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের সূচনার দিনটিকে চিহ্নিত করে। এ দিনে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এবং তাদের দোসররা বিশ্ব ইতিহাসের সবচেয়ে জঘন্যতম গণহত্যার সূচনা করেছিল’- বলেন তিনি।

সেমিনারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘অপারেশন সার্চলাইট’ এবং পুরো যুদ্ধকালীন হত্যার ধরনটির স্পষ্ট উদ্দেশ্য ছিল, সমাজের নির্দিষ্ট কিছু অংশকে বিশেষ করে ধর্ম, জাতি ও রাজনৈতিক বিশ্বাসের ভিত্তিতে চিহ্নিত ব্যক্তিদের নির্মূল করা।

সেমিনারে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বক্তব্য রাখেন। এতে জেনোসাইড ওয়াচের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক গ্রেগরি স্ট্যান্টন এবং প্রখ্যাত গণহত্যা বিশেষজ্ঞ ড. হেলেন জার্ভিস পৃথক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

এই বিভাগের আরও খবর


ফেসবুকে আমরা